ঢাকা , বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫ , ১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
জন্মদিন উদযাপন করে সমালোচনার মুখে পড়লেন ইয়ামাল বিশ্বকাপজয়ী আলমাদাকে দলে ভেড়াচ্ছে অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদ ভুটানের সাথে জয় পেলো বাংলাদেশ ৪৩ বছর বয়সে ‘দ্য হান্ড্রেডে’ অভিষেক হতে যাচ্ছে অ্যান্ডারসনের শাস্তির সম্মুখীন হলেন স্টোকসরা বড় সাকিবের প্রত্যাশা; ছোট সাকিবও হবে অলরাউন্ডার ঢাকায় পৌঁছালো পাকিস্তান দল টি-টোয়েন্টি র‌্যাংকিংয়ে বড় লাফ দিলো রিশাদ বদলির আদেশ প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলায় মোট ১৪ এনবিআর কর্মকর্তা বরখাস্ত শতকোটি টাকা ব্যয়ে হচ্ছে গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর জুলাইয়ের চেতনায় একসঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার প্রধান উপদেষ্টার রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব শেয়ারবাজারে ইসিতে ৪৩ হাজার পৃষ্ঠার নথি জমা দিয়েও বাছাইয়ে ফেল এনসিপি যৌক্তিক শুল্ক প্রত্যাশা বাংলাদেশের ১৫ টাকা দরে ৩০ কেজি চাল পাবে ৫৫ লাখ পরিবার-খাদ্য উপদেষ্টা ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্ল্যান্ট চুক্তি রিভিউ হবে-অর্থ উপদেষ্টা এ বছরের শেষ নাগাদ তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে চূড়ান্ত সুখবর-পরিবেশ উপদেষ্টা পঞ্চদশ সংশোধনীতে হাসিনা ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার চেষ্টা করেছিলেন : বদিউল আলম মজুমদার নিবন্ধন চাওয়া ১৪৪ দলই প্রাথমিক বাছাইয়ে অনুত্তীর্ণ ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি আরও ৩৭৫
জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতাল

বাক্সবন্দি মেশিন এখন চায়ের টেবিল

  • আপলোড সময় : ১৬-০৭-২০২৫ ০৪:৫৪:১১ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১৬-০৭-২০২৫ ০৪:৫৪:১১ অপরাহ্ন
বাক্সবন্দি মেশিন এখন চায়ের টেবিল
* স্টোরে নতুন মেশিন, বন্ধ পিটি আইএনআর ও এপিটিটি * চিঠি দিয়ে বন্ধ করা হয়েছে ট্রপোনিন আই টেস্ট * নামকাওয়াস্তে হয় সিবিসি টেস্ট, মানা হয় না নিয়ম * স্টোরে পড়ে আছে নতুন মাইক্রোস্কোপ * সব দায় সরকারের ওপর চাপাচ্ছেন পরিচালক আশরাফ হোসেনের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ সদরে। তিন হাসপাতাল ঘুরে সন্তানকে নিয়ে এসেছেন রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে। চার বছর বয়সী শিশুসন্তান ইমাম হোসেনের হার্টে একাধিক ছিদ্র। কোনো চিকিৎসক সার্জারি করতে সাহস পাচ্ছেন না। স্ত্রীর চাপে এখানে আসছেন সার্জারি করতে। কিন্তু সব টেস্টের সুযোগ না থাকায় পাশের বেসরকারি হাসপাতালে দৌড়াতে হচ্ছে তাকে। একই অবস্থা মিরপুর-১১ থেকে আসা হাজেরা বেগমের (৪০)। তার বুকের ভাল্ভ-এর সমস্যায় সার্জারি করতে হয়েছে। রোগী আইসিইউতে। এই আইসিইউর রোগীরও টেস্ট করতে হয়েছে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। তার স্বামী মাসুদ গাজী বলেন, হাসপাতালে টেস্ট হয় না। ডাক্তারের কথা মতো ভিক্টোরিয়া ডায়াগনস্টিক ল্যাব ও শিশু হাসপাতাল থেকে টেস্ট করেছি। তার কাগজ দেখে জানা গেলো-ইকো, পিটি আইএনআরসহ কয়েকটি পরীক্ষার রিপোর্ট বাইরের। একই অবস্থা মো. রাজুর (৪০)। তিনি বেশ কয়েকটি পরীক্ষা করিয়েছেন বেসরকারি বায়োল্যাবে। মর্জিনা বেগম (৫৪) নামে একজনও পিটিআই এনআর ও এপিটিটি টেস্টের জন্য গেছেন বেসরকারি ক্যাপিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। ইমাম হোসেন, হাজেরা, রাজু, মর্জিনা শুধু নন, প্রতিদিন হাসপাতালটিতে সেবা নেয়া ২০০০-২২০০ রোগীর বেশ কিছু টেস্টের জন্য যেতে হয় বাইরে। সরকারি হাসপাতালের রোগী কেন প্রতিদিন বাইরে যাবে টেস্ট করতে? এমন প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে উঠে এসেছে, হাসপাতালটিতে গত দুই-আড়াই বছর ধরে বন্ধ হার্টের রোগীদের জরুরি পিটি আইএনআর, এপিটিটিসহ কয়েকটি টেস্ট। অথচ হাসপাতালের স্টোরে গিয়ে দেখা যায়, ওইসব টেস্টের নতুন মেশিন মোড়কজাত অবস্থায় স্টোরে পড়ে আছে। সেগুলোর একটিকে চা বানানোর টেবিল হিসেবেও ব্যবহার করা হচ্ছে। মেশিনের ওপর চায়ের কেটলিসহ সরঞ্জাম পড়ে আছে। অদৃশ্য কারণে এগুলো ইনস্টল করা হচ্ছে না। একই সঙ্গে নতুন করে হার্টের রোগীরা বুকে ব্যথা নিয়ে এলে হৃদরোগ নির্ণয়ে প্রথমেই ট্রপোনিন আই টেস্ট করাতে হয়। চিকিৎসকদের চিঠি দিয়ে এই টেস্ট না দেয়ার অনুরোধ করেন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক। অনুসন্ধানে পাওয়া যায়, সিবিসি টেস্টের রিপোর্টও নামকাওয়াস্তে করে দেয় জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল। পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট করা হয় না। সিবিসি টেস্ট শুধু সেল কাউন্টার মেশিনে করে। নিয়ম অনুযায়ী, সøাইড তৈরি করে স্টেইন করে মাইক্রোস্কোপে দেখে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রিপোর্ট তৈরি করে দেয়ার কথা। অথচ নতুন মাইক্রোস্কোপ মেশিনটিও মোড়কজাত অবস্থায় পড়ে আছে স্টোরে। এত সব কিছুর জন্য সরাসরি সরকাকে দায়ী করেই দায়িত্ব শেষ করছেন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল ওয়াদুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, এগুলো আপনাকে বলার কিছু নেই। সরকার বাহাদুরকে বলেন রি-এজেন্ট কেনার টাকা দিতে। তাহলে সবই চলবে। অনুসন্ধানে উঠে আসে, এ বছরের শুরু থেকেই হাসপাতালের স্টোরে পড়ে আছে স্পেনের অত্যাধুনিক হেমাটোলজি অ্যানালাইজার (৫ পার্টস), মাল্টি চ্যানেল কো-এগুলেশন অ্যানালাইজার এবং বিএ২১০ মডেলের মাইক্রোস্কোপ। স্টোরে গিয়ে দেখা যায়, নতুন মেশিনগুলো প্যাকেটজাত অবস্থায় পড়ে আছে। সেগুলোর মধ্যে প্রায় ১৬ লাখ টাকা মূল্যের মেশিন এখন চায়ের কেটলি রাখার টেবিল হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। স্পেন থেকে প্রকৌশলী এসেও স্থাপনের অনুমতি না পেয়ে ফিরে গেছেন। অথচ এসব মেশিনের একটি মাল্টি চ্যানেল কো-এগুলেশন অ্যানালাইজারে হার্টের রোগীদের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ টেস্ট পিটি আইএনআর ও এপিটিটি হয়। আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটউট ও হাসপাতালে এসব টেস্ট হয় না। বাধ্য হয়ে আশপাশের বেসরকারি ক্লিনিকে পাঠিয়ে দেন চিকিৎসকরা। ঢাকার বাইরে থেকে আসা একাধিক রোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখানে স্বাভাবিকভাবে ডাক্তার দেখিয়ে টেস্ট করে রিপোর্ট দেখিয়ে একদিনে চলে যাওয়া যায়। কিন্তু পিটি আইএনআর ও এপিটিটিসহ বেশ কিছু পরীক্ষা এখানে হয় না। এগুলো দিলে ঢাকায় আরেকদিন থাকতে হয়। কারণ আশপাশের বেসরকারি হাসপাতালে এসব টেস্ট করালে সন্ধ্যায় রিপোর্ট দেয়। যে কারণে রাতে থেকে পরদিন এসে আবার ডাক্তারকে দেখাতে হয়। পিটি আইএনআর সরকারিতে ১০০ টাকায় হয়, অথচ বেসরকারিতে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত নেয়। এপিটিটি সরকারিতে ২০০ টাকা হলেও বেসরকারিতে ৬০০ থেকে এক হাজার টাকাও নেয়। স্পেনের হেমাটোলজি অ্যানালাইজার (৫ পার্টস) মোড়কজাত রেখে পুরোনো মেশিনে করা হয় সিবিসি টেস্ট। শুধু তাই নয়, সিবিসি টেস্টের রিপোর্ট সেল কাউন্টারের মেশিনের নির্ভরশীল। নিয়ম থাকা সত্ত্বেও সøাইড তৈরি করে স্টেইন করে মাইক্রোস্কোপে দেখা হয় না। অথচ একটি নতুন মাইক্রোস্কোপ মেশিন মোড়কজাত অবস্থা পড়ে আছে স্টোরে। এতে সম্পদের যেমন সঠিক ব্যবহার হচ্ছে না, তেমনি সঠিক রিপোর্ট থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। এ বিষয়ে প্রখ্যাত হেমাটোলজিস্ট বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেমাটোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এবিএম ইউনুস বলেন, ব্লাডের এত ধরনের রোগ আছে, যেটা সেল কাউন্টারের ওপর নির্ভর করে রিপোর্ট দিলে পূর্ণাঙ্গ হয় না। তবে জরুরিভিত্তিতে আপনি ‘র’ ডাটা হিসেবে দিতে পারেন। কিন্তু এটাকে ভেরিফাই করতে হলে ম্যানুয়াল চেক করতে হবে। সøাইড করে মাইক্রোস্কোপে দেখবেন। ওটার মধ্যে আপনার জ্ঞান ব্যবহার করে এটাকে অ্যাসেসমেন্ট এবং অ্যানালাইস করে ফাইনাল রিপোর্ট তৈরি করবেন। তিনি বলেন, মারাত্মক একটা ভুল করে সেল কাউন্টার। এটা হলো প্ল্যাটিলেট কাউন্টার। সেল কাউন্টারে কিছু কিছু বিষয়ে ক্লিয়ার আসে। তবে ক্যানসারের কোষ, ম্যালেরিয়া, থ্যালাসেমিয়াসহ নানান বিষয় ধরতেই পারে না। এটা একজন হেমাটোলজিস্টকে দেখতেই হবে। স্পেন থেকে আসা অত্যাধুনিক মেশিন চায়ের টেবিল হিসেবে ব্যবহার করলেও চীনের একই মেশিন নতুন করে আরেক কোম্পানি থেকে নেয়ার আবেদন রিসিভ করেছে হাসপাতাল। সে অনুযায়ী কার্যক্রমও চলছে। এসব বিষয়ে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল ওয়াদুদ চৌধুরী কাছে সরকারকে দায়ী করেই বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, সরকার বাহাদুরকে বলেন রি-এজেন্ট কেনার টাকা দিতে। সরকার টাকা দেবে না, কিন্তু চাইবে সব মানুষকে সব সেবা দিতে তা তো সম্ভব না। গত ২২ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে হাসপাতালের পরিচালক স্বাক্ষরিত একটি নোটিশ সব চিকিৎসককে দেয়া হয়। এতে বলা হয়, সংশ্লিষ্ট সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, অত্র হাসপাতালে ট্রপোনিন আই রি-এজেন্টের স্বল্পতার কারণে অতি প্রয়োজনীয়তা ছাড়া ট্রপোনিন আই টেস্টের অ্যাডভাইস না করার অনুরোধ করা হলো। উন্নত রোগী সেবা ও হাসপাতালের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য এই আদেশ জারি করা হলো। যথাযথ অনুসন্ধানের জন্য গত ২৩ জুন নিজেই রোগী হয়ে বেশ কয়েকটি টেস্ট করান প্রতিবেদক। এর মধ্যে ট্রপোনিন আইও ছিল। রক্ত দিতে গিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন প্রায় ৩০০ রোগীর ট্রপোনিন আই করা হয়। সে হিসেবে এ মাসের ৩০ জুন পর্যন্ত চলবে। কিন্তু পরবর্তী অর্থবছরের রি-এজেন্ট সাপ্লাই এখনো আসেনি। সেজন্য এখন থেকে কমিয়ে দেয়া হয়েছে। হাসপাতালটির উপ-পরিচালক অধ্যাপক ডা. মুনীর আহমদ খানও বলেন, নতুন করে রি-এজেন্ট সাপ্লাই আসা পর্যন্ত যাতে চালানো যায় সেজন্য টেস্ট হার সংকুচিত করা হয়েছে। সরবরাহে কোনো সমস্যা আছে কি না তা সবিস্তারে বলতে নারাজ কর্তৃপক্ষ। খোদ হাসপাতালের পরিচালক বলেন, সম্পদের সঠিক ব্যবহারের জন্য আমরা ট্রপোনিন আইয়ের বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছি। আমার যতটুকু সম্পদ আছে অতটুকু দিয়ে যাতে রোগীদের সেবা করা যায়। প্রকৃত রোগীরাই যাতে সেবাটা পায়। একজন পরিচিত বা আত্মীয় এলো প্রয়োজনের বাইরেও তাকে যাতে এই পরীক্ষা না দেয়া হয়, সেজন্য এমন নির্দেশনা দিয়েছি। কার্যত এখন মুখ চেয়েই টেস্ট দেয়া হয়। পরিচিত থাকলে টেস্ট করিয়ে নেয়া সহজ। না হয়, বেগ পেতে হয় বা টেস্ট করা যায় না। বাইরে যাওয়া লাগে। হাসপাতালের গত ৭ জুলাইর নথি ঘেঁটে দেখা যায়, বহির্বিভাগে ১২৪৭ জন এবং জরুরি বিভাগে ৯৬৯ জন রোগী এসেছেন। ওইদিন মোট ২২১৬ জন রোগী এসেছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এদের মধ্যে যারা বুকে ব্যথা নিয়ে নতুন আসেন, তাদের ট্রপোনিন আই করা লাগে। আর অপারেশন পরবর্তী ফলোআপে এলে তাদের পিটিআই এনআর ও এপিটিটি করতে হয়। এসব রোগীর আর্থিক ক্ষতি ও ভোগান্তি নিয়ে নির্বিকার কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম বলেন, কী কী পরীক্ষা হয় না আমাকে দেন। আমি খতিয়ে দেখবো।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স